Friday, December 31, 2010

ফেসবুকের রাজস্ব আয় প্রযুক্তি বিশ্বে বিতর্ক

ফেসবুকের রাজস্ব আয় প্রযুক্তি বিশ্বে বিতর্ক

আবু হেনা শাহরিয়া : বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুক রাজস্ব আয়ের নতুন রেকর্ড গড়েছে। তবে এ নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। ২০০৯ সালে ফেসবুকের মোট রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল আটশত মিলিয়ন ডলার। এই রাজস্বের পরিমান আগের চেয়ে প্রায় একশ মিলিয়ন ডলার বেশি। একটি সূত্র বলছে, গত বছর ফেসবুকের আয়ের পরিমাণ ছিল দশ মিলিয়ন ডলার। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে না বললেও এ নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে প্রযুক্তি বিশ্বে। একটি ব্লগে ফেসবুকের আনুমানিক রাজস্ব আয়ের পরিমাণ সাতশত মিলিয়ন ডলার উল্লেখ করা হয়েছে এবং ফেসবুকের বোর্ড মেম্বার মার্ক এন্ডারসন বলেছেন, ২০০৯ সালে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ পাঁচশত মিলিয়ন ডলার। তবে ফেসবুক তাদের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে না বললেও এ নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে প্রযুক্তি বিশ্বে। ফেসবুকের একটি ব্লগে রাজস্ব আয় সম্পর্কিত এক বার্তায় বলা হয়েছে যে, ২০১০ সালে ফেসবুকের মোট রাজস্ব আয় প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ফেসবুকের জনপ্রিয়তা বিবেচনায় দ্রুত বাড়ছে এর ব্যবহারকারী। অন্যদিকে বাড়ছে ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের চাহিদাও। সবকিছুর সমবয়ে বেড়েই চলছে ফেসবুকের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট হিসেবে ফেসবুক ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ফেসবুক প্রতিষ্ঠার সময় বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান পোপাল-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিল প্রায় পাঁচ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। দিন দিন বেড়েই চলছে ফেসবুকের পরিধি। জনপ্রিয়তম এই সাইটটিকেও বিভিন্ন সময় পড়তে হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে। কখনো কখনো সমালোচনা ও বিতর্কের কারণে দেশে দেশে বিভিন্ন মেয়াদে ফেসবুক বন্ধ করাও হয়েছে। তবে কমেনি ফেসবুকের জনপ্রিয়তা। ফেসবুক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সাইটকে সহজ ও ব্যবহার বান্ধব করতে নানা উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। সম্প্রতিক সময়ে এর নিরাপত্তার ইস্যুটি অনেক বেশি সমালোচনার ঝড় তোলে বিশ্বব্যাপী। সমালোচনার মুখে ফেসবুক তাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন ফিচার যুক্ত করে। ব্যবহারকারী বাড়ার সাথে সাথে উন্নততর নেটওয়ার্কিং সেবা প্রদানে তৎপর ফেসবুক। ফেসবুকের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, নানা সুবিধার ফলে আগামীদিনে আরো দ্রুতহারে বাড়বে এর ব্যবহারকারী এবং রাজস্বের পরিমাণ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় দেড়হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছেন। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বায়নের যুগে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোও বর্তমানে অনেক বেশি পরিমাণ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত তাদের ব্যবহারকারী বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়ে। এই প্রতিযোগিতায় আগামী দিনে কে বেশি এগিয়ে থাকে তা এখন দেখার বিষয়।
বর্তমানে সারা বিশ্বে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটির উপরে। আর বাংলাদেশে এর ব্যবহারকারী বর্তমানে ৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর প্রতি মাসে ফেসবুকে ছবি আপলোড হয় ৩০০ কোটিরও বেশি। ১৩ বছরের বেশি বয়সের যে কেউ সহজেই ফেসবুকে নিবন্ধনের মাধ্যমে সাইটটিতে যুক্ত হতে পারেন। শেয়ার করতে পারেন ছবি, ভিডিও, ওয়েব ঠিকানা বা অন্য যে কোনো ফাইল। শেয়ার করা যে কোনো মতামত বা ছবিতে বন্ধুরা মন্তব্য করতে পারেন। পাল্টা মন্তব্যও চলে। ব্যক্তিগত বার্তাও পাঠানো যায়, যা কেবল যাকে পাঠানো হয় সে-ই পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এছাড়াও নতুন বা পরিচিত বন্ধু খোঁজার জন্য ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক রয়েছে।

Source: Daily Sangram

Sunday, December 19, 2010

প্রতিদ্বনিদ্বতার মুখে ফেসবুক!

প্রতিদ্বনিদ্বতার মুখে ফেসবুক!
-মোহাম্মদ জাফর ইকবাল

সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা বর্তমান সময়ে ঈর্ষণীয়হারে বেড়েই চলেছে। এই সাইটগুলোর মধ্যে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ফেসবুক। এটি কেবল ছাত্র বা যুবক শ্রেণীর মাঝেই জনপ্রিয় নয়, এটি এখন প্রয়োজনের খাতিরে সব বয়সের লোকেরাই এটির সাথে ব্যাপক পরিচিত। বর্তমানে সারাবিশ্বে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। মাত্র কয়েক বছরে অর্জন করা এই জনপ্রিয়তা উৎসাহিত করেছে আরও সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট তৈরি করতে। ফেসবুক বা টুইটার বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত হলেও পরবর্তীতে বেশ কিছু ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে স্থানীয় জনগণভিত্তিক। বিশেষ করে চীন, রাশিয়া বা ভারতের মতো দেশগুলোর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যায় রয়েছে পৃথিবীর শীর্ষস্থানে। এখানকার মানুষদের কথা ভেবেই তৈরি হয়েছে চীনের সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ‘কিউ জোন' আর ভারতে তৈরি হয়েছে 'আইবিবো'। স্থানীয় মানুষদের লক্ষ করে তৈরি করা এই সাইটগুলোর ইতোমধ্যেই সাড়া ফেরতে সক্ষম হয়েছে মানুষদের মাঝে। এইসব সাইটগুলো স্থানীয়ভাবে শক্ত প্রতিদ্বনিদ্বতার মুখে ফেলেছে ফেসবুককেও!
ফেসবুকের প্রতিদ্বনিদ্ব হয়ে উঠা একটি সামাজিক ওয়েবসাইটের নাম ‘আইবিবো'। আইবিবো'র যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। ভারতে গুগলের সেলস এবং অপারেশনের চিফ আশিষ ক্যাপ কেবল ভারতীয়দের জন্য একটি সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের কথা চিন্তা করে তৈরি করেন আইবিবো। এই সাইটটিতে ভারতীয়দের কথা ভেবে যুক্ত করা হয়েছে নানান ফিচার। এতে রয়েছে ব্লগ, ফটোস্টোরেজ, গেমস, মেইল, মেসেঞ্জার প্রভৃতি সার্ভিস। এছাড়াও রয়েছে ফ্রি এসএমএস সার্ভিস ও ভিডিও আপলোডের ব্যবস্থাও। আইবিবোতে রয়েছে একটি বিশেষ টুলস আইফ্রেশফেস। যার মাধ্যমে নতুন নতুন মডেলরা তাদের মডেলিং পোর্টফোলিও শেয়ার করতে পারে এই সাইটে। তবে আইবিবোতে বেশ জোর দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সোস্যাল গেমিং-এর উপর। ভারতীয় উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি এই গেমগুলো সাইটটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বেশ ভূমিকা রেখেছে। আইবিবো'র জনপ্রিয় গেমগুলোর একটি হচ্ছে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান পার্কিং ওয়্যার'। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অলস গরু সরিয়ে দিয়ে নিজের গাড়ি পার্কিং করে এখানে পয়েন্ট নিতে হয়। ভারতীয় রাস্তাঘাট আর গরুর ব্যবহার গেমটিকে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে। এখন পর্যন্ত সাইটটি ব্যবহারকারী ৩৭ মিলিয়ন। যা একে ভারতের মধ্যে সর্ববৃহৎ সোস্যাল নেটওয়ার্কে পরিণত করেছে।
বৃহৎ জনসংখ্যার আরেক বড় দেশ এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ চীনও পিছিয়ে নেই এর থেকে। দেশটির সর্ববৃহৎ ওয়ব পোর্টাল টেনসেন্ট ২০০৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে ‘কিউজোন' নামের সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। শুরুতে খুব একটা জনপ্রিয়তা লাভ না করতে পারলেও কিউজোন পরবর্তীতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কেবল চীনের জন্য এই সোস্যাল নেটওয়ার্কে বর্তমানে ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। এই সাইটটিতেও রয়েছে ব্লগিং এবং ডায়েরী লেখার ব্যবস্থা। তাছাড়া ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা, গান শোনা এবং নিজের প্রোফাইল পেজটি নিজের মতো করে কাস্টমাইজড করার সুবিধাও রয়েছে। ‘ক্যানারী ডায়মন্ড' কেনার মাধ্যমে এতে আরো অনেক সুবিধা উপভোগ করা যায়। এক হিসাবে দেখা গেছে, ব্যবহারকারীর সংখ্যায় চীনে এমনকি ফেসবুকও নেই কিউজোনের ধারে কাছে।
চীনের সবচেয়ে বড় পোর্টাল হচ্ছে টেনসেন্ট। টেনসেন্টের ইন্সট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস কিউকিউ পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় একটি সার্ভিস যার সক্রিয় ব্যবহারকারী ৫৬৯ মিলিয়ন। এই সংখ্যা গতবছরের তুলনায় ৩৯% বেশি। তুলনামূলক বিচারে এওএল'র এআইএমও রয়েছে অনেক পেছনে। যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক এই সার্ভিসের ব্যবহারকারী মাত্র ২৫ মিলিয়ন। চীনে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া টেনসেন্ট এখন রীতিমতো একটি মডেলে দাঁড়িয়ে গেছে।
এদের পাশাপাশি রাশিয়াভিত্তিক মেইল ‘ডট আরইউ' এবং ‘ডিএসটি'ও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এদের ব্যবহারকারী বিশ্বব্যাপী ১৬ মিলিয়ন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি নিয়ে আন্তঃযোগাযোগ ইন্টারনেটে এসব দেশের প্রভাব বিস্তারে বেশ ভূমিকা রাখছে। যেমন, টেনসেন্ট এর ৩৫% মালিকানা দক্ষিণ আফ্রিকান কোম্পানি ন্যাপস্টারের। আবার ন্যাপস্টার এবং টেনসেন্টের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আইবিবো। সম্মিলিত এই উদ্যোগ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর আধিপত্য ভাঙতে ভূমিকা রাখছে বলে অনেকেই মনে করেন।
অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রিয়তা অর্জনকারী সোস্যাল নেটওয়ার্কিং এই সাইটগুলোর সাফল্যে বসে নেই প্রতিষ্ঠিত অন্য শক্তিরাও। যেমন গত জুলাইয়ে ফেসবুক দায়িত্ব গ্রহণ করে গুগলের ‘অরকুট' এর এবং তারা এটিকে ভারতের সর্ববৃহৎ সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে হায়দারাবাদে একটি অফিস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে এতে শংকিত নয় আঞ্চলিক সাইটগুলো। শুরুতে চাইনিজ বা হিন্দি ভাষায় সাইট তৈরিতে বেশ সমস্যা হলেও পরবর্তীতে তারা সে সমস্যার সমাধান করে নেয। এর মাঝে তারা নতুন নতুন আরও ফিচার নিয়েও তারা কাজ করে। যেমন, টেনসেন্টের অত্যন্ত সফল একটি প্রচেষ্টা ছিল ভার্চুয়াল কারেন্সি ‘কিউ-কয়েন'। কিউ-কয়েন ব্যবহার করে টেনসেন্ট, কিউকিউ এবং কিউজোন ব্যবহারকারীরা অনলাইন গেমসের জন্য অস্ত্র কিনতে পারে এবং গান এবং ভিডিও দেখতে পারে। টেনসেন্ট'র দেখাদেখি এখন আইবিবোতেও ব্যবহার হচ্ছে ভার্চুয়াল কারেন্সি যা কিনা ভারতীয়তা মোবাইলের টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহার করে অনলাইনে ভার্চুয়াল পণ্য কিনছে। ফেসবুকের বিভিন্ন গেমস এবং অ্যাপ্লিকেশনে এ রকম ভার্চুয়াল কারেন্সি সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে।
মূলত বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফেসবুকের গেমগুলোর আদলে তৈরি করা হচ্ছে স্থানীয় সাইটগুলো। আইবিবো'র জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে তাদের গেমসগুলো। কিউজোনেও ফেসবুকের গেমসের পাশাপাশি যুক্ত করা হচ্ছে আঞ্চলিকতার আবহ। নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের এই আবহ-ই এই সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখবে বলে বিশ্বাস করেন আইবিবো বা কিউজোনের শীর্ষ ব্যক্তিরা। বিশ্বব্যাপী ফেসবুক বা টুইটার জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকলেও আঞ্চলিক সোস্যাল নেটওয়ার্কে বেশ এগিয়ে চীনের কিউজোন আর দ্রুত এগিয়ে আসছে ভারতের আইবিবো। বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের জনপ্রিয়তার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের গবেষক গ্রান্ট ব্ল্যাংক বলেছেন ইংরেজি ভাষা এবং পাশ্চাত্যের প্রভাব এর পেছনে বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে এরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আঞ্চলিকতার ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেখানে অনেকে বিষয়ই আলাদা।

Source: Daily Sangram